লাথি মার, ভাঙ্গরে তালা! যত সব বন্দী শালায়-. আগুন-জ্বালা,…
এই শব্দগুলো আপনার মনের ভিতরে কেমন উন্মাদনা তৈরি করে? অনেক! তবে যুদ্ধের সময়, কিংবা শোষকের বিরুদ্ধে যখন এগুলো গাওয়া হয় তখন শরীরের মধ্যে এক অদম্য শক্তি আর সাহসের সঞ্চার হয় ।
রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেবো, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ
এগুলো বুলেটের চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী। একটি বুলেট একটি মানুষকে হত্যা করতে পারে, তারপরে বুলেটের কার্য্কারিতা শেষ। কিন্তু এই শব্দগুলো যেন জীবন্ত! একটি থেকে আরেকটির জন্ম, তারপর আরেকটির এভাবে চলতে চলতে পুরো জাতিগোষ্ঠির মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। এই শব্দগুলো তাই হয়তো পারমানবিক বোমার চেয়েও শক্তিশালী।
যারা একটু বিদেশি গান শুনেন তারা হয়তো অনেকেই জানেন ল্যাটিন অ্যামেরিকার দেশ, বিশেষত জ্যামাইকা, পুয়েরতোরিকোর মিউজিক দারুণ জনপ্রিয়। যেকোনো গান বক্সঅফিস হিট করতে হলেই যেনো রিমিক্স করতে হবে। আর রিমিক্স মানেই যেনো জ্যামাইকান শিল্পী! তো সেই জ্যামাইকানরা বলতো ”যেহেতু আমাদের অস্ত্র নাই তাই আমাদের এক একটি শব্দ হচ্ছে এক একটি অস্ত্র”।তারা তাই এমন সব শব্দ দিয়ে জনগনকে একত্রিত করে সাদাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতো!
অর্থাৎ শব্দগুলো মানুষের মনের উপর দারুণ প্রভাব ফেলতে পারে।
(১) যথাযথ পরিবেশে (২) যথাযথ শব্দগুলো বুলেটের চাইতেও দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের মনে প্রভাব ফেলার জন্য শব্দের গুরুত্ব অপরিসীম ! শব্দ দিয়েই মানুষের মগজ ধোলাই করা হয়। স্বার্থবাদী গোষ্ঠিগুলো তাই এগুলোর অপব্যবহার করে থাকে। যাদের জ্ঞানের পরিধি ছোট, কম জানার কারণে প্রশ্ন করার প্রবণতা যাদের কম, তাদের মাঝে এই প্রভাব আরো বেশি। তাই পৃথিবীর সমস্ত রেবেল গোষ্ঠিগুলো কম জানা ঐ শিশুদের টার্গেট করে করে মগজ ধোলায় করে থাকে। আবার ধর্মব্যবসায়ীদের টার্গেট কাস্টমার কিন্তু ঐ কম শিক্ষিতরাই।
শুধু ধর্ম ব্যবসা নয়, মূলত সব ব্যবসাতেই একই অবস্থা। নিজেদের ব্যবসা বৃদ্ধি করতেই তাই বিজ্ঞাপন তৈরি করা হয়, বিজ্ঞাপনে ইমোশন দিয়ে জনগনের আস্থা অর্জন করা হয়। বার বার একই কথা বলতে বলতে মগজ ধোলাই হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ স্বভাবতই সরল বিশ্বাসী। বিশ্বাসের কাছে যুক্তি খুবি তুচ্ছ ! একবার বিশ্বাস জন্মাতে পারলে সে বিশ্বাস ভাঙতে অনেকগুলো যু্ক্তির অবতারণা করতে হয়। তারপরেও হয়তো সেসব বিশ্বাস ভাঙানো যায়না।
ভুমিকা শেষ, এবার আসা যাক মূল আলোচনায়
(১) যথাযথ পরিবেশে
বড় বড় শেয়াব্যবসায়ীরা মুনাফা করার জন্য প্রথমে নিজেদের অনুকূলে যথাযথ পরিবেশ তৈরি করে। এই পরিবেশ তৈরি করতে সোস্যাল মিডিয়াসহ, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাহায্য নেয়া হয়।
এই ধারণার প্রবক্তা সম্ভবত ওয়ালস্ট্রিটের কুখ্যাত ট্রেডার জেসন গোল্ড, শেয়ারবাজারের ইবলিশ নামে যিনি অধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি সবসময় শর্ট সেল করার পরপর তার নিজের পত্রিকায় ঐ শেয়ার বিষয়ে অনেক নেতিবাচক লেখা লিখতেন। দর পড়ে যাওয়ার পরে কম দামে কিনে সমন্বয় করতেন।
আমাদের দেশেও টিভি, পত্রিকা ও ফেসবুক গ্রুপে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলে ও লিখে প্রথমে আস্থা তৈরি করা হয়। যেহেতু বিরাট জনগোষ্ঠির মাঝে বিশ্বাস তৈরি না করতে পারলে নিজেদের পক্ষে যথাযথ অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা যায়না, তাই গ্রুপ তৈরির প্রথম কাজ প্রচুর সদস্য সংগ্রহ । প্রচুর সদস্যদের ভাবনা যখন একই রকম হয়, তখনই অ্যাকশনে যাওয়া হয়। ঐ প্রচুর সদস্যরাই কিন্তু সাধারণ জনগন যারা রিপ্রেজেন্ট করে ঐ ৯৫ শতাংশকে, যারা সবসময়ই ক্ষতিগ্রস্থ।
(২) যথাযথ শব্দ
যথাযথ পরিবেশ তৈরি হয়েছে, এবার যথাযথ শব্দের অবতারণা করতে হবে। বিগত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করতে বেশ কতগুলো শব্দের বহুল ব্যবহার হয় এই ফেসবুক গ্রুপ ও প্রিন্ট মিডিয়াতে !
চমক:
যেমন, ’সূচকের চমক দিয়ে বাজার শুরু’ ; ‘ফার্মা সেক্টরের চমকে বাজারের গতি পেয়েছে’ ইত্যাদি..
এই চমক শব্দের প্রভাবে ঘুমিয়ে থাকা বিনিয়োগকারীরাও চমকে উঠে শেয়ার কিনতে উঠে পড়ে । কৃত্রিমভাবে ঠেক দিয়ে রাখা বাজারের একটি নির্দিষ্ট সূচকের নিচে নামার সূযোগ নাই । সেই ঠেক দেয়া ম্যাড়ম্যাড়ে বাজারে সূচকের মাত্র ৫২ পয়েন্ট বাড়লেও তারা হয়তো আপনার মগজে ঢুকিয়ে দিয়ে বলবে যে ”এটা চমক! সামনে বাজার অনেক ভালো হবে।”
হুলুস্থুল:
যেমন, ‘অমুক সেক্টরে হুলুস্থুল কান্ড’। আপনি দেখবেন সত্যি সত্যিই ধুম-ধাম করে শেয়ারের দর বেড়ে যাচ্ছে। আপনিও হুলুস্থুলভাবে কিনলেন। হুলুস্থুলের রেশ মস্তিষ্কে বেশ কিছুদিন ধরে থাকবে। তাই দর পড়লেও আমলে নিবেননা। হুলুস্থুলের রেশ কেটে গেলে দেখবেন আপনি লোকসানে পড়ে গেছেন।
হুমড়ি;
যেমন, অমুক সেক্টরের শেয়ার বিদেশিরা হুমড়ি খেয়ে কিনছে। এখানে বিদেশি শব্দটাও প্রভাব বিস্তার করে। ঐ শব্দটা শুনলেই যেনো আমরা সবাই ভৃত্য হয়ে উঠতে চাই।
তাই এইসব শব্দের সাগরে অবগাহন না করে সাবধান হওয়াটা অনেক বেশি যুক্তিযুক্ত ! এগুলো এক একটি বুলেট যা আপনার বুক/সম্পদ ঝাঁঝরা করে দেবে।
এবার দেখা যাক আপনি এমন কয়টি শব্দ খুঁজে বের করতে পারেন! যতই এমন শব্দ খুঁজে বের করা যাবে ততই নিরাপদ থাকা যাবে।
One thought on “শেয়ার বাজারে – শব্দের সাগরে”
ভালো লেখা