মূল্য-আয় অনুপাতের গুরুত্ব

আমরা জেনেছি, কোম্পানির PE Ratio যত কম সেই কোম্পানিতে বিনিয়োগ তত ভালো/নিরাপদ। আমরা আরও জেনেছি প্রতিদিনের এই মূল্য-আয় অনুপাতের তালিকা ডিএসই এর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, ডিএসইতে প্রকাশিত এই তালিকা কি বার্ষিকী, নাকি অর্ধবার্ষিকী, নাকি অন্য কোনো সময়ের?

প্রতিটি কোম্পানিকে প্রতি তিনমাস অন্তর আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে হয়।

  • প্রথম তিন মাসের আয় যদি ২ টাকা হয় তবে ধরে নেয়া হয় পুরো বছরের আয় হবে ৮ টাকা
  • প্রথম নয় মাসের আয় যদি ৯ টাকা হয় তবে ধরে নেয়া হয় পুরো বছরের আয় হবে ১২ টাকা।

প্রথমত:

এই ধরে নেয়া এক বছরের আয়ের উপর ভিত্তি করে বছর শেষে PE কত হতে পারে সেটাই প্রকাশ করা হয় ডিএসই এর ওয়েবসাইটে। অর্থাৎ আমরা যেটাকে PE বলছি সেটা আসলে সম্ভাব্য PE ! এই সম্ভাব্য PE এর উপর ভিত্তি করে একটি কোম্পানির মৌলভিত্তি যাচাই করা কতটুকু অর্থ বহন করে !

দ্বিতীয়ত:

বেশিরভাগ কোম্পানির সারা বছরের আয়ে ধারাবাহিকতা থাকেনা। বর্ষার সময় নিশ্চয় রড-সিমেন্টের ব্যবসা ভালো হয়না। সুতরাং ঐ বর্ষার সময়ের ক্ষুদ্র আয় বিবেচনায় নিয়ে সারা বছরের PE নির্ধারণ করা কতটুকু অর্থ বহন করে 🤔!

তৃতীয়ত:

একটি কোম্পানির প্রথম তিনমাসের আয়ের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত PE এর সাথে অপর কোম্পানির নয় মাসের আয়ের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত PE এর তুলনা করে বিনিয়োগের জন্য শেয়ার যাচাই করা কতটুকু অর্থ বহন করে 🤔!

চতুর্থত:

ব্যাংকের আনরিয়্যালাইজড ইনকাম (পকেটে না আসা আয়) বিবেচনায় নিয়ে Net Income হিসেব করা হয়। পক্ষান্তরে উৎপাদন সংক্রান্ত কোম্পানিগুলির রিয়্যালাইজড ইনকাম বিবেচনায় নিয়ে Net Income হিসেব করা হয়। তাহলে ব্যাংকের PE এর সাথে সিমেন্ট কোম্পানির PE তুলনা করে বিনিয়োগের জন্য শেয়ার নির্বাচন করা কতটুকু অর্থ বহন করে 

William J. O’Neil তাঁর বিখ্যাত ”How to Make Money in Stocks” বইতে লিখেছেন, Don’t buy a stock solely because the P/E ratio looks cheap!

তিনি তাঁর বইতে আরও বলেছেন, পিই রেশিওর উপর ভিত্তি করে কোম্পানির শেয়ার অতিমূল্যায়িত বা অবমূল্যায়িত বিবেচনা করা চরম বোকামী।

মৌলভিত্তি বিশ্লেষণে যেসকল নিয়ামক আছে তাদের মধ্যে বিভিন্ন Financial Ratio অন্যতম। এমন অসংখ্য রেশির মাঝে পিই রেশিও একটি ক্ষুদ্র অংশ। সম্ভাব্য পিই রেশিও দ্বারা যদি কোম্পানির সম্ভাব্য পার্ফর্মেন্স বিচার করতে হয় তবে সেক্ষেত্রে বিগত বছরগুলোর আয়ের ধারাবাহিকতা আগে দেখতে হবে। অর্থাৎ শুধু PE দেখা নিরর্থক, এর সাথে আনুসঙ্গিক আরও অনেক বিষয় দেখতে হয়। মনে আছে নিশ্চয়, রেশিও মানে তুলনা। আমাদের আরও দেখতে হয়, শেয়ারপ্রতি সম্পদমুল্যের তুলনায় বর্তমান দর বেশি না কম; পরিশোধিত মুলধনের তুলনায় ঋণ বেশি না কম; ঋণের তুলনায় সঞ্চিতি বেশি না কম…! এছাড়াও দেখতে হয় সরকারের নীতিসহায়তা, সামগ্রীক অর্থনীতি, পরিচালকদের চরিত্র ইত্যাদি ।

  • এত এত বিষয় বিচার করার সক্ষমতা আমার আছে কি?
  • এত এত বিষয় বিচার করার জন্য যে শ্রম আমাকে দিতে হয়, সে তুলনায় আমার বিনিয়োগের পরিমান যথেষ্ট কি?
  • অধিক শ্রম কিন্তু ক্ষুদ্র বিনিয়োগ – সেই হিসেবে আমার শ্রম, সময় ও অর্থের বিনিয়োগে রিটার্ন কি যথেষ্ট হবে?
  • যাদের সক্ষমতা আছে তারা এই বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগে কি বিফল হচ্ছেন না?

সাম্প্রতিক সময়ের ফিন্যান্সিয়াল স্ক্যাম হচ্ছে Greensill Capital, যেখানে জাপানের SoftBank এর বিরাট বিনিয়োগ আছে। ১.৫ বিলিয়ন ডলারের সেই বিনিয়োগ তারা ফিরে পাবেনা ধরে নিয়েই গত বছরের শেষে এই এতবড় ফিগারটি Write Down করেছে। এটা কি মৌলভিত্তিক বিশ্লেষণের বিরাট ব্যর্থতা নয়? আমাদের দেশে BIFC সহ বেশ কিছু কোম্পানির আর্থিক অবস্থা খারাপ সেটা অনেক আগে থেকেই প্রকাশ করা হচ্ছে। কিন্তু ILFSL এর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ২০১৯ সালের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্তও যেখানে ১৩ টাকা ছিলো বছর শেষে তা হয়ে গেলো -১১৩ টাকা 🥺, মৌলভিত্তি বিশ্লেষণ করে কেউ কি বুঝতে পেরেছিলেন পিকে হালদার কি ঘটনাই না ঘটিয়েছেন?

মৌলভিত্তি বিশ্লেষণের নিয়ামক অসীম! এই অসীম বিষয়ের আলোচনাও যেনো অসীম। যে কাজ করার আমার মুরোদ নাই সেই কাজ না করে আমি বরং চুপি চুপি বিরাট অংকের বিনিয়োগকারীদের অনুসরণ করতে চাই। কারণ ঐ বিরাট অংকের বিনিয়োগকারীদের এইসব মৌলভিত্তিক বিশ্লেষণ করতেই হয়/হবে। তাঁদেরকে অনুসরণ করার জন্য রয়েছে এক বিশেষ কৌশল, যে কৌশলে নিয়ামক সীমিত – মাত্র দুটি! প্রতিদিনের লেনদেন হওয়া ভলিউ্যমপ্রাইস!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *